গাইবান্ধা শহরের বাসিন্দা কামরান নাহিদ। বয়স ছত্রিশ ছুঁই ছুঁই। পেশায় উদ্যোক্তা, রয়েছে গরুর খামার। নিজ খামার দেখাশোনার পাশাপাশি সমাজের জন্য নিবেদিত হয়ে কাজ করার চেষ্টা করেন। তার স্বেচ্ছাশ্রম ও আন্তরিকতা মন ছুঁয়েছে গ্রামবাসীর।
২০ বছর ধরে মৃত ব্যক্তির গোসল দেওয়ার কাজ করছেন এই যুবক। কারও মৃত্যুর খবর পেলেই নিজ দায়িত্বে ছুটে যান। মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেওয়া থেকে শুরু করে মরদেহ দাফনের সব প্রস্তুতি তিনি সামাল দেন। শোকাতুর পরিবারকে মুহূর্তের মধ্যেই আপন করে নেন। ইসলাম ধর্মের রীতি মেনে গোসল দিয়ে দাফনের জন্য প্রস্তুত করেন মরদেহ। এখন পর্যন্ত দুই শতাধিক মানুষকে নিজ হাতে শেষ বিদায়ের গোসল দিয়েছেন তিনি। কখনো গোসল করাতে গিয়ে কেঁদেছেন আবার কোনো মৃত ব্যক্তির মুখে লেগে থাকা হাসি দেখে ফেলেছেন প্রশান্তির নিশ্বাস। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত এই মহতী কাজ করে যেতে যান কামরান।
ফেলে আসা দিনগুলোর স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, শৈশব থেকে দেখেছি আশপাশে কেউ মারা গেলে মুরুব্বিরা আমার বাবাকে ডাকতেন। বাবা নিজ হাতে তাদেরকে সুন্দর করে গোসল করাতেন। আমি মনে করি মৃত্যুর পর মরদেহের প্রতি মানবতা দেখানো ইসলাম ধর্মের অনন্য এক বৈশিষ্ট্য। শেষ বিদায়ের গোসল করানো অত্যন্ত সওয়াবের কাজ। এখানে ভয়ের কিছু নেই।
কামরান আরও বলেন, ২০০২ সালের দিকে আমি অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। তখন আমার বাবা শারীরিকভাবে কিছুটা অসুস্থ হয়ে পড়েন। বাবা মাঝেমধ্যে বলতেন মৃত ব্যক্তির গোসলের কাজে দু-একজন লোক দরকার হয়। অনেক সময় অন্য লোকজনকে ডাকলে আসতে চায় না। বাবা তুমি আমার সঙ্গে থাকলে আমার একটু সাহায্য হবে, মানুষেরও উপকার হবে। এটি সামাজিক ও ধর্মীয় কাজ। অনেক সওয়াব আছে, একইসঙ্গে মানুষের ভালোবাসাও আছে। তখন থেকেই বাবার সঙ্গে মরদেহ গোসলের কাজে যেতাম।