বাড়ির চারিদিকে পানি আর পানি, বাইরে বের হওয়া যাচ্ছে না। উঠানে চুলা, সেই চুলায় পানি উঠেছে। তাই আলগা চুলা এনে আপাতত সেখানে রান্না হচ্ছে।
মঙ্গলবার (২০ জুন) কুড়িগ্রামের সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের পোড়ার চরে গিয়ে এমন চিত্র দেখা যায়।
এসময় কথা হয় সাহের বানু (৬০) নামে এক বৃদ্ধার সঙ্গে। তিনি বলেন, স্বামীর বয়স হয়ে গেছে কাজকর্ম করতে পারে না। তার মধ্যে আবার বন্যা আসছে। যেভাবে পানি বাড়ছে, কিসের ঈদ। যে অবস্থা এখন জীবন বাঁচা নিয়া কথা। বাড়িতে তিনজনই বুড়ো মানুষ। বাড়ি তলিয়ে গেল কি হবে আমাদের।
ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে কুড়িগ্রামের ওপর দিয়ে প্রবাহিত ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা ও দুধকুমারসহ ১৬টি নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেলেও সবগুলো পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। প্রতিদিন প্লাবিত হচ্ছে নদ-নদী তীরবর্তী চর-দ্বীপসহ নিম্নাঞ্চল।
নিমজ্জিত হচ্ছে নদ-নদী অববাহিকার মৌসুমি শাক সবজিসহ বিভিন্ন ফসলের খেত। জেলার নাগেশ্বরী, উলিপুর, চিলমারী, রৌমারী, রাজিবপুর ও কুড়িগ্রাম সদরের নিম্নাঞ্চলের শত শত পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এসব এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। বর্তমানে নৌকায় যাতায়াত করছে এখানকার মানুষজন। চর এলাকার নলকূপ তলিয়ে যাওয়ায় বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট দেখা দিয়েছে।
মঙ্গলবার (২০ জুন) কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড অফিস সূত্রে জানা গেছে, সকাল ৯টায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি নুনখাওয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৬৬ সেন্টিমিটার, ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপৎসীমার ৭১ সেন্টিমিটার, ধরলা নদীর পানি সদর পয়েন্টে বিপৎসীমার ৮৪ সেন্টিমিটার ও দুধকুমার নদীর পানি জেলার ভুরুঙ্গামারীর পাটেশ্বরী পয়েন্টে বিপৎসীমার ৪১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত সবগুলো নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলেও এখনও বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী ২২ ও ২৩ জুন এসব নদ-নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। তবে আগামী ১০ দিনের মধ্যে বড় কোনো বন্যার সম্ভাবনা নেই বলে জানান তিনি।