কৃষক নয়, ধান দিচ্ছে সিন্ডিকেট চক্র

কুড়িগ্রামের উলিপুরে সরকারি খাদ্যগুদামে কৃষকের বদলে ধান সংগ্রহ করা হচ্ছে সিন্ডিকেট চক্রের কাছ থেকে। কৃষকের ন্যায্যমূল্য পাওয়া নিশ্চিত করতে ধান বেচাকেনার প্রক্রিয়া ডিজিটালাইজড করা হলেও সেখানে রয়েছে শুভংকরের ফাঁকি। কেননা, লটারির মাধ্যমে নির্বাচিতদের তালিকায় রয়েছেন সিন্ডিকেট চক্রের স্বজনসহ জমিজমা না থাকা ব্যক্তিরাও। কৃষকদের অভিযোগ, উপজেলা ধান সংগ্রহ কমিটির পরোক্ষ যোগসাজশে সিন্ডিকেট চক্র লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। ফলে বঞ্চিত হচ্ছেন কৃষকরা।

সরেজমিনে গত রোববার দুপুরে উপজেলা খাদ্যগুদাম চত্বরে গিয়ে দেখা যায়, অর্ধশতাধিক ট্রলি ও ট্রাক্টরে ধানের বস্তা নিয়ে অবস্থান করছেন ধান ব্যবসায়ীরা। মাঠপর্যায় থেকে এক-দুই হাজার টাকায় কৃষকদের কাছ থেকে কৃষিকার্ড সংগ্রহ করেছেন তারা। বেশ কয়েকজনের কাছে একাধিক কৃষকের কৃষিকার্ড, এনআইডি ও তাদের সই করা ফাঁকা চেকের পাতা দেখা গেছে। উপজেলা খাদ্যগুদাম ঘিরে গড়ে ওঠা মিল-চাতালমালিকদের সিন্ডিকেট চক্রের কারণে ব্যবসায়ীদের ধান নিয়মবহির্ভূত হওয়ায় ফেরত পাঠায় গুদাম কর্তৃপক্ষ।

অভিযোগ রয়েছে, সিন্ডিকেট চক্র নানা কারসাজির মাধ্যমে ভূমিহীন, দিনমজুর ও অসচ্ছল ব্যক্তিদের লটারিতে বিজয়ী দেখিয়ে তাদের নামে গুদামে ধান দিচ্ছে। গত রোববার অসদুপায় অবলম্বন করে ট্রলি ও ট্রাক্টরের ধান গুদামে ঢোকানোর চেষ্টা করলে বিষয়টি জানাজানি হয়। পরে তালিকার সূত্র ধরে উপজেলার ধামশ্রেণী, গুনাইগাছ ও থেতরাই ইউনিয়নসহ পৌরসভা এলাকায় অনুসন্ধান করলে থলের বিড়াল বেরিয়ে আসে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, লটারিতে উপজেলা মিল-চাতালমালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাহফুজার রহমান বুলেটের পরিবারের একাধিক সদস্যর নাম রয়েছে। তালিকায় রয়েছে প্রভাবশালী সিন্ডিকেট চক্রের সদস্যদের স্বজন, প্রতিবেশী ও বাড়ির কাজের লোকসহ আরও অনেকের নাম।

পৌরসভার মুন্সিপাড়ার বাসিন্দা মাসুদ রানা বলেন, ‘শনিবার রাত ১১টা থেকে ১৫০ বস্তা ধান নিয়ে গুদামে পড়ে আছি। গুদাম কর্তৃপক্ষ গেট খোলে না। সকালে সিন্ডিকেট চক্র আর বড় ব্যবসায়ীরা আসার পর গেট খুলে দেয়। ব্যবসায়ীদের নিয়ে পরীক্ষা করছে। সিন্ডিকেট সদস্যদের ধান গুদামে নিচ্ছে আর আমাদেরটা মান খারাপ দেখিয়ে ফেরত পাঠাচ্ছে। সিন্ডিকেট সদস্য আর বড় বড় ব্যবসায়ী ছাড়া এখানে কেউ ধান দিতে পারে না। আমাদের ধানের চেয়ে খারাপ মানের ধান সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কিনে গুদামে রেখেছে।’ একই এলাকার বাসিন্দা সেকেন্দার আলী বলেন, ‘দুই হাজার টাকার বিনিময়ে কৃষকের কাছ থেকে কৃষিকার্ড সংগ্রহ করেছি। সেই কার্ড ধরে খাদ্যগুদামে ধান দিতে আসছি। কিন্তু ধানে আর্দ্রতা দেখিয়ে ফেরত দিল ওসিএলএসডি (সরকারি খাদ্যগুদামের কর্মকর্তা)। আমার ধানের চেয়ে নিম্নমানের ধান সিন্ডিকেটের কাছ থেকে কিনে গুদাম ভরিয়েছে। শুধু সিন্ডিকেট সদস্য না হওয়ায় আজ আমার ধান নিল না। এখানে যারা ধান নিয়ে আসছে, তাদের কেউই কৃষক নয়। সবাই কৃষকের কাছ থেকে কার্ড কিনে ধান দিতে আসছে। এভাবেই চলছে এই খাদ্যগুদাম।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *