ব্রহ্মপুত্র ভাঙনের হুমকিতে ফসলি জমি ও সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা

কুড়িগ্রামের রাজীবপুর ও রৌমারী উপজেলায় কয়েকদিন থেকে ব্রহ্মপুত্রে পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত একমাসে ৭০টি বসতভিটাসহ ফসলি জমি নদে বিলীন হয়েছে। এতে নিঃস্ব হয়ে পড়েন শতাধিক পরিবারের মানুষ। ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে শত শত পরিবার। এছাড়া হুমকির মুখে পড়েছে আবাদি জমি, স্থানীয় বাজার, মসজিদ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন স্থাপনা। ভাঙন ঠেকাতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

সরেজমিনে ঘুরে জানা যায়, ব্রহ্মপুত্রে পানি বাড়তে থাকায় রাজীবুপর উপজেলার কোদালকাটি ইউনিয়নের সাজাই বাজারপাড়া ও পাইকান্টারী এলাকায়সহ ৩৫টি বসতবাড়ী ও ফসলি জমিসহ বিভিন্ন স্থাপনা ব্রহ্মপুত্রে বিলীন হয়েছে। এদিকে রৌমারী উপজেলার চরশৌলমারী ইউনিয়নের ঘুঘুমারী এলাকায় তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত একমাসে ৩৫টি বসতবাড়ি ও আবাদি জমিসহ বিভিন্ন স্থাপনা নদের গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এতে ভাঙন হুমকির মুখে রয়েছে চর খেদাইমারী, চর ইটালুকান্দা, চরগেন্দার আলগা, ফলুয়ার চর, পালেরচর, কান্দাপাড়া, দিঘলাপাড়া ও ধনারচর পশ্চিমপাড়া এলাকা। তবে স্থানীয়রা বলছেন এসব এলাকায় নামমাত্র জিও ব্যাগ ফেলে দায় সারেন কর্তৃপক্ষ।

রাজীবপুর উপজেলার কোদালকাটি ইউনিয়নের পাইকান্টারী এলাকার নজর ভানু বলেন, তাঁর বাড়ির ভিটা ছাড়া কোনো জমি নেই। মাথা গোঁজার ঠাইটুকু ব্রহ্মপুত্রে বিলিন হয়েছে। সে এখন পাইকান্টারী বাজার রাস্তায় ছাপড়া ঘর তৈরী করে বসবাস করছেন।

চরশৌলমারী ইউনিয়নের চর গেন্দার আলগা গ্রামের ছকিনা খাতুন বলেন, তাঁর বসতবাড়ি ও গাছপালা সবই ব্রহ্মপুত্রে বিলীন হয়েছে। তাঁর নিজের কোনো জমি নাই। পাশে অন্যের জমিতে ছাপড়া ঘরে বাস করছেন তিনি।

ভাঙনের শিকার রাজীবপুরের কোদালকাটি ইউনিয়নের সাজাই বাজারপাড়া এলাকার ওহাব আলী, আমজাদ হোসেন, আবু সাইদ, মানিক মিয়া, আব্দুল ছালাম, সাহেদ আলী ও পাইকান্টারী এলাকার নজর ভানু, জাহানারা বেগম, আব্দুল লতিফ, রফিকুল ইসলাম, গোলাপ উদ্দী, মাইদুল ইসলাম, ছাবিয়া খাতুন, রফিকুল ইসলাম, সাইরুদ্দী বলেন, প্রতিবছর ব্রহ্মপুত্রে পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তীব্র ভাঙন শুরু হয়। এতে বসতভিটা হারিয়ে নিঃস্ব হন অনেকে। গত একমাসে তাদের ৩৫টি বসতভিটা ব্রহ্মপুত্রে বিলীন হয়েছে। তাঁদের চোখের সামনেই এসব বসতভিটা বিলীন হয়। চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না তাঁদের। বসতভিটা হারিয়ে এখন নিঃস্ব তাঁরা।

রাজীবপুরের কোদালকাটি ইউনিয়ন পরিষদের স্থানীয় ওয়ার্ড সদস্য নুরুল আমিন বলেন, ব্রহ্মপুত্র নদে পানি বাড়ার কারণে তীব্র ভাঙন শুরু হয়। এতে বসতভিটা হারিয়ে অনেকে নিঃস্ব হয়েছেন। তবে এবিষয়ে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ও রংপুর বিভাগীয় প্রকৌশলীকে জানানো হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

চরশৌলমারী ইউনিয়নের ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক বলেন, গত দুইমাস আগে পানি সম্পদমন্ত্রী ও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী নদী ভাঙন এলাকা দেখে গেছেন। কিন্ত এখন পর্যন্ত কার্যকরী কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ইতোমধ্যে অনেক পরিবার ভাঙনের শিকার হয়ে পথে বসেছেন। ভাঙনের শিকার মানুষদের পুনর্বাসন করার দাবি তাঁর।

চরশৌলমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান একেএইচএম সাইদুর রহমান দুলালের ভাষ্য, তাঁর ইউনিয়নে প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। ঘুঘুমারী গ্রামটি সম্পন্ন বিলীনের পথে। গত একমাসে ৩৫টি বসতবাড়ি নদে বিলীন হয়েছে। ভাঙনে নিঃস্ব হয়ে অন্যের জমিতে ঠাই নিয়ে বসবাস করছেন অনেকে। তাই ভাঙনের শিকার মানুষদের পুনর্বাসন করা জরুরি। তিনি জানান, এখনও সরকারিভাবে কোনো সহযোগিতা পাওয়া যায়নি। তবে গ্রামবাসী ও ইউনিয়ন পরিষদের সহযোগিতায় বাঁশের বান্ডাল নির্মাণ করে ভাঙনরোধ ঠেকানোর চেষ্টা চলছে। তাঁর দাবি, গত তিন বছরে ঘুঘুমারী এলাকার ৩০০ বসতভিটা ব্রহ্মপুত্রে বিলীন হয়ে যায়।

রাজীবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মাহমুদুল হাসান বলেন, ভাঙন এলাকায় পরিদর্শন করে। নদীর গর্ভে বসতবাড়ি বিলিন হওয়া পরিবারদের সরকারীভাবে সহায়তা দেওয়া হবে।

রৌমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদ হাসান খান বলেন, ভাঙন এলাকায় খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, বিষয়টি তাঁর জানা আছে। ভাঙন এলাকাগুলো পরিদর্শন করার জন্য লোক পাঠানো হবে। তিনি জানান, কিভাবে ভাঙন রোধ করা যায়, সেই ব্যবস্থা করা হবে। তবে রাজীবপুরের কোদালকাটি ইউনিয়নে তিন কিলোমিটার এলাকায় ভাঙনরোধে কাজ চলমান রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *