নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে আশ্বস্ত করল বাংলাদেশ

স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করার জন্য নির্বাচন কমিশনের বিভিন্ন পদক্ষেপ সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রকে অবহিত করেছে বাংলাদেশ। যুক্তরাষ্ট্রও বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পাশাপাশি মানবাধিকার ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ সমুন্নত রাখার আকাঙ্ক্ষা পুনর্ব্যক্ত করেছে।

গত বুধবার (৩ মে) মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ডের সঙ্গে এক আলোচনায় বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান জানান।

ওয়াশিংটনে দুই দেশের নবম অংশীদারত্ব এই আলোচনায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মাদ ইমরানসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে রাষ্ট্রদূত পিটার হাস, অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু ও হোয়াইট হাউসসহ অন্যান্য বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সংলাপের পর বৃহস্পতিবার ভোরে প্রচারিত এক টুইট বার্তায় ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্ক গভীর করার প্রাক্কালে পররাষ্ট্রসচিব মোমেনের (মাসুদ বিন মোমেন) সঙ্গে বৈঠক হলো। আমরা অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনসহ মানবাধিকার ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রচারে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছি। সেই সঙ্গে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য আমরা বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানিয়েছি।”

বৃহস্পতিবার সকালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন বাংলাদেশের সম্প্রতি প্রকাশিত ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের রূপরেখার কথা ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ডের কাছে তুলে ধরেন। তিনি বাংলাদেশের স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পথ সুগম করতে নির্বাচন কমিশনের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ সম্পর্কেও অবহিত করেন। এ সময় যুক্তরাষ্ট্র অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর জোরালো অঙ্গীকারের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের যুক্ত করার জন্য মানসিকতার প্রশংসা করেছে।

বাংলাদেশের সাম্প্রতিক মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নতির কথা উল্লেখ করে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব র‌্যাবের ওপর থেকে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের অনুরোধ জানান। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মস্বীকৃত ও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত খুনি রাশেদ চৌধুরীকে হস্তান্তরের আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন।

ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড বাংলাদেশ সরকার এ বছরের মধ্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পর্যালোচনা করার যে ঘোষণা দিয়েছেন, সে বিষয় উল্লেখ করেছেন। তিনি যুক্তরাষ্ট্র থেকে আরও বেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে শ্রম খাতের সংস্কারের পাশাপাশি অব্যাহত অগ্রগতি যে প্রয়োজন, সে বিষয়ে জোর দিয়েছেন। আলোচনায় দুই দেশ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ খাতে ক্রমবর্ধমান ও গতিশীল ব্যবসায়িক সহযোগিতায় সন্তোষ প্রকাশ করেছে। তাঁরা বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের বৃহৎ প্রযুক্তিগত প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবসায়িক সম্পৃক্ততা বাড়াতে অন্তর্জাল নিরাপত্তা ও উপাত্ত সুরক্ষায় আরও কাজ চালিয়ে যেতে রাজি হয়েছেন।

ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অসাধারণ উদারতার প্রশংসা করেন। তিনি এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত মানবিক সহায়তার আশ্বাস দেন। মাসুদ বিন মোমেন তাকে রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তায় পরিচালিত তহবিলের সর্বশেষ পরিস্থিতি এবং সীমিতসংখ্যক রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের জন্য পাইলট প্রকল্প আবার চালুর বিষয়ে অবহিত করেন। দুই পক্ষই সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ কিছু রোহিঙ্গার পুনর্বাসন কার্যক্রমকে আরও ত্বরান্বিত করতে রাজি হয়েছে।

উভয় পক্ষ জলবায়ু পরিবর্তনসংক্রান্ত বিষয়ে তাদের মতবিনিময় করেছে এবং এ বিষয়ে সহযোগিতার ক্ষেত্র নিয়ে আলোচনা করেছে। এদিকে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার এক বিবৃতিতে বলেন, বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার নবম অংশীদারত্ব সংলাপে উভয় পক্ষই রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, পরিবেশগত ও নিরাপত্তাসংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে ক্রমবর্ধমান অংশীদারত্বের প্রতি তাদের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *