দেশে উৎপাদিত গবাদিপশু দিয়েই কোরবানির চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে এবং বিদেশ থেকে পশু আমদানির কোনো প্রয়োজন নেই বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।
বুধবার (১৪ জুন) সচিবালয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব তথ্য জানান। শ ম রেজাউল করিম বলেন, ‘এ বছর কোরবানির পশুর সম্ভাব্য চাহিদা ১ কোটি ৩ লাখ ৯৪ হাজার ৭৩৯টি। সে হিসেবে এ বছর ২১ লাখ ৪১ হাজার ৫৯৪টি পশু উদ্বৃত্ত রয়েছে। গত চার-পাঁচ বছরের মতো এবারও দেশে উৎপাদিত গবাদিপশু দিয়েই কোরবানির চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে। বিদেশ থেকে পশু আমদানির কোনো প্রয়োজন নেই। পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে সীমান্ত পথে যেন অবৈধভাবে গবাদিপশু আসতে না পারে সেজন্য কঠোর নজরদারি করা হচ্ছে। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে ইতোমধ্যে পত্র দেওয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘‘এ বছর কোরবানির পশুর সম্ভাব্য চাহিদা ১ কোটি ৩ লাখ ৯৪ হাজার ৭৩৯টি। এরমধ্যে কোরবানিযোগ্য গবাদিপশুর সংখ্যা ১ কোটি ২৫ লাখ ৩৬ হাজার। সে হিসেবে এবার ২১ লাখ ৪১ হাজার ৫৯৪টি পশু উদ্বৃত্ত আছে।
‘এ বছর কোরবানিযোগ্য মোট গবাদিপশুর সংখ্যা ১ কোটি ২৫ লাখ ৩৬ হাজার ৩৩৩টি, যা গতবছরের চেয়ে ৪ লাখ ১১ হাজার ৯৪৪টি বেশি। এ বছর কোরবানিযোগ্য গবাদিপশুর মধ্যে ৪৮ লাখ ৪৩ হাজার ৭৫২টি গরু-মহিষ, ৭৬ লাখ ৯০ হাজার ছাগল-ভেড়া এবং ২ হাজার ৫৮১টি অন্যান্য প্রজাতির গবাদিপশু।” তিনি বলেন, ‘কোরবানিযোগ্য মোট গবাদিপশুর সংখ্যার মধ্যে ঢাকা বিভাগে ৮ লাখ ৯৫ হাজার ৪৫৪টি, চট্টগ্রাম বিভাগে ২০ লাখ ৫৩ হাজার ১২৮টি, রাজশাহী বিভাগে ৪৫ লাখ ১১ হাজার ৬১৪টি, খুলনা বিভাগে ১৫ লাখ ১১ হাজার ৭০৮টি, বরিশাল বিভাগে ৪ লাখ ৯৩ হাজার ২০৬টি, সিলেট বিভাগে ৪ লাখ ১০ হাজার ২২৫টি, রংপুর বিভাগে ১৯ লাখ ৬২ হাজার ৯৫১টি এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ৬ লাখ ৯৮ হাজার ৪৭টি কোরবানিযোগ্য গবাদিপশু রয়েছে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘কোরবানি সামনে রেখে কোনো ধরনের রাসায়নিক দ্রব্য, স্টেরয়েড, হরমোন ও অ্যান্টিবায়োটিক ছাড়া নিরাপদ পদ্ধতিতে গরু হৃষ্টপুষ্টকরণ কার্যক্রম বাস্তবায়নে এ বছরও স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ বিভাগ ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সমন্বিতভাবে কাজ করবে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর এ বছর ৭২ হাজার ৫৬৩ জন খামারিকে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে গবাদিপশু হৃষ্টপুষ্টকরণ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘পশুখাদ্যে ভেজাল বা নিষিদ্ধ অ্যান্টিবায়োটিক ও হরমোনের ব্যবহার বন্ধে নিয়মিত সার্ভিল্যান্স ও প্রয়োজনে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে। এ বছর প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা সারাদেশে ৮৭ হাজার ৯৫টি খামার পরিদর্শন করে। এসব খামারে স্টেরয়েড বা হরমোনের অপপ্রয়োগ বন্ধের উদ্যোগ নিয়েছে। কোরবানির হাটে এ বছর কোনোভাবেই রোগাক্রান্ত বা অসুস্থ পশু বিক্রি করতে দেওয়া হবে না।’
এ লক্ষ্যে গত বছরের মতো এবারও সারাদেশে পশুর প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার জন্য ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম কাজ করবে বলেও জানান মন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘ভেটেরিনারি মেডিকেল টিমের কার্যক্রম মনিটরিংয়ের জন্য কেন্দ্রীয় মনিটরিং টিম এবং বিশেষজ্ঞ মেডিকেল টিম গঠন করা হবে। গত বছর সারাদেশে ৩ হাজার ১৯৫টি কোরবানির পশুর হাটে দায়িত্ব পালনের জন্য ১ হাজার ৬২৩টি ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম কাজ করেছে। কোরবানির হাট ব্যবস্থাপনার জন্য মনিটরিং টিম গঠন ও কন্ট্রোল রুম খোলা হবে।’
এ বছরও সড়কপথ, রেলপথ এবং নৌপথে গবাদিপশু পরিবহনের সময় পশু ও পশু বিক্রেতার নিরাপত্তা নিশ্চিত করাসহ কোরবানির পশুর ট্রাক ছিনতাই রোধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, জেলা প্রশাসন ও জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর যৌথভাবে কাজ করবে বলেও জানান প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী।
এবারও কোনো খামারি নিজ বাড়ি থেকে পশু বিক্রি করলে তাকে হাসিল দিতে হবে না। কোনো খামারি তার পশু দূরবর্তী হাটে নিতে চাইলে, রাস্তাঘাটে জোর করে নামাতে বাধ্য করা যাবে না। এক্ষেত্রে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, স্থানীয় সরকার ইউনিট তথা পৌরসভা, উপজেলা বা ইউনিয়ন পরিষদ, সিটি কর্পোরেশন এ বিষয়টি নিশ্চিত করবে। হাটে আনার পথে কেউ প্রাণি বিক্রি করলে তার কাছ থেকে ইজারা গ্রাহক জোর করে চাঁদা বা হাসিল আদায় করতে পারবে না বলেও জানান তিনি।
মন্ত্রী জানান, বাংলাদেশ ব্যাংকের উদ্যোগে বিগত বছর ৬টি পশুর হাটে ৩৩ কোটি টাকার ডিজিটাল লেনদেন হয়েছে। এ বছর ঢাকা ও চট্টগ্রামের পশুর হাটগুলোতে ক্যাশলেস বা নগদ টাকাবিহীন লেনদেনের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কোরবানির পশুর হাটগুলোতে কিউআর কোড, স্মার্ট অ্যাপ, এটিএম বুথ, পয়েন্ট অব সেলস মেশিন, মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস), এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে লেনদেন করা হবে। এছাড়া প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সহায়তায় ২৬টি জেলায় ১০টি ব্যাংক ও ৩টি মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) প্রোভাইডারের মাধ্যমে ডিজিটাল লেনদেনের কার্যক্রম শুরু করেছে।
মন্ত্রী বলেন, ‘আসন্ন ঈদুল আজহা ২০২৩ উদযাপন উপলক্ষ্যে সড়কের ওপরে যত্রতত্র কোরবানির পশু জবাই না করে যথাসম্ভব নির্ধারিত স্থানে কোরবানি করার জনসচেতনতা সৃষ্টির ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিগত তিন বছরের ধারাবাহিকতায় এবারও অনলাইন প্ল্যাটফর্মে গবাদিপশু বিক্রয় কার্যক্রম চলবে। এক্ষেত্রে অনলাইনে প্রতারণা রোধে অনলাইনে আপলোড করা পশুর মালিকের নাম, ঠিকানা, মোবাইল নম্বর, পশুর বয়স, ওজন, মূল্য ও ছবি সংযোজন করতে হবে।’
এ বছর স্বাস্থ্যসম্মতভাবে গবাদিপশু কোরবানির জন্য কোরবানির পশুর চামড়া ছাড়ানো ও সংরক্ষণ বিষয়ে ৩১ হাজার ৭৯৯ জন পেশাদার ও অপেশাদার কসাইকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।