রাজশাহী ও সিলেট সিটি নির্বাচনে প্রচার-প্রচারণার শেষ দিন সোমবার। ইতোমধ্যেই প্রচার-প্রচারণায় গণসংযোগে ব্যস্ত সময় পার করেছেন দুই সিটির মেয়র প্রার্থীরা।
নির্বাচনকে সামনে রেখে গণসংযোগ করেছেন রাজশাহীর জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী সাইফুল ইসলাম স্বপন। অন্যদিকে, আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন নিয়মিত নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কে গণসংযোগ করেছেন। জনগনের দ্বারে দ্বারে গিয়ে উন্নয়নের আশ্বাস দিয়েছেন মেয়র প্রার্থীরা।
রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) নির্বাচন থেকে সরে যেতে চান জাতীয় পার্টির মেয়রপ্রার্থী সাইফুল ইসলাম স্বপন। ইভিএমে সুষ্ঠু ভোট হবে না, এমনটি দাবি করে তিনি বলেন, নির্বাচনে আসার সিদ্ধান্তটাই ছিল ভুল। এখন নির্বাচন থেকে সরে যেতে চায়। এ জন্য কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত জানতে চেয়েছি। রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত কেন্দ্র থেকে কিছু জানানো হয়নি। তাই সরে যেতে পারছি না।’
আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী খায়রুজ্জামান লিটন ছাড়া অন্য আরেকজন প্রার্থী হলেন জাকের পার্টির গোলাপ ফুল প্রতীকের প্রার্থী লতিফ আনোয়ার। এই নির্বাচন নিয়ে লতিফ আনোয়ার এখনও কোন অভিযোগ তোলেননি। সবকিছু ঠিকঠাকই দেখছেন তিনি।
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) ১৫৫টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ১৪৮টি ঝুঁকিপূর্ণ। রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. দেলোয়ার হোসেন এ তথ্য জানান।
তিনি জানান, ভোট গ্রহণের মাত্র দুদিন বাকি। কমিশনের পক্ষ থেকে সবধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। নাশকতার চেষ্টা করলে কঠোর হাতে দমন করা হবে। ২ জুন প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে প্রচার-প্রচারণায় নামেন মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা।
মো. দেলোয়ার হোসেন জানান, এবারই প্রথম রাজশাহী সিটি নির্বাচনে ইভিএমে ভোট-গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। সব কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা লাগানোর কাজ চলছে। এখন পর্যন্ত কোনো প্রার্থী তাদের কাছে লিখিত অভিযোগ করেনি।
রাজশাহী মেট্রপলিটন পুলিশ কমিশনার আনিসুর রহমান বলেন, আমাদের কাছে সাব কেন্দ্রই গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা সব কেন্দ্রে পুলিশ নিয়োগ করেছি। এর মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে ৬-৭ জন আর সাধারণ কেন্দ্রে পাঁচজন করে পুলিশ রাখা হয়েছে।
২১ জুন রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। রাজশাহীতে এবার তিন লাখ ৫১ হাজার ৯৮২ জন ভোট দিবেন। এরমধ্যে নতুন ভোটার ৩০ হাজার ১৫৭ জন। পুরুষ ভোটার এক লাখ ৭১ হাজার ১৬৭ জন এবং নারী এক লাখ ৮০ হাজার ৮০৯ জন ও হিজরা ভোটার ৬ জন। এবার ১৫৫টি ভোট কেন্দ্রের এক হাজার ১৫৩টি কক্ষে ইভিএমে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
এদিকে রোববার সিলেট সিটি নির্বাচনে ২১ দফা ইশতেহার ঘোষণা করেছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুল।
এছাড়া নগরীর বিভিন্ন এলাকায় নিয়মিত গণসংযোগ করেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। নির্বাচিত হলে সিলেট শহরকে একটি আধুনিক নগরীতে পরিণত করার আশ্বাস দিয়েছেন মেয়র প্রার্থীরা।
সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) নির্বাচনের ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রের তালিকা প্রস্তুত করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তালিকা অনুযায়ী ১৯০টি কেন্দ্রের মধ্যে ১৩২টি কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তালিকায় নগরের ১৮টি ওয়ার্ডের সব কটি কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। বাকি ৫৮টি কেন্দ্র সাধারণ (ঝুঁকিমুক্ত) বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। তালিকা অনুযায়ী ৪, ৫, ৬, ৭, ৮, ১৫, ২২, ২৪, ২৫, ২৬, ২৮, ২৯, ৩০, ৩১, ৩৬, ৩৮, ৩৯ ও ৪২ নম্বর ওয়ার্ডের সব ভোটকেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। আর ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের সবকটি কেন্দ্র ঝুঁকিমুক্ত।
রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের সূত্র অনুযায়ী, সিসিক নির্বাচনে মেয়র পদে ৮ জন, সাধারণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ২৭৩ জন এবং সংরক্ষিত ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ৮৭ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ১৯০টি কেন্দ্রে মোট ভোটকক্ষ রয়েছে ১ হাজার ৩৬৪টি। এসব কক্ষ ও কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা থাকবে এক হাজার ৬৪৭ টি। প্রতি কেন্দ্রে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন ৭ জন আনসার, ৫ জন পুলিশ।
এছাড়াও ভোটের পরিবেশ সুষ্ঠু করতে ১৪ জন জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, ৪২ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কাজ করবেন। এমনকি প্রতি ১০ জন বিজিবি টহলের সঙ্গে থাকবেনে একজন করে ম্যাজিস্ট্রেট।
মহানগর পুলিশ জানায়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোকে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ ও ঝুঁকিমুক্ত কেন্দ্রকে ‘সাধারণ’ কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করেছে। ওই গুরুত্বপূর্ণ ও সাধারণ কেন্দ্র অনুযায়ী ভোটের দিন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা হবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, কেন্দ্রে নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকা, কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে সহিংসতার শঙ্কা, যোগাযোগ বিড়ম্বিত কেন্দ্র, অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটার আশঙ্কাসহ নানা দিক বিবেচনা করে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ কেন্দ্র চিহ্নিত করা হয়ে থাকে।
সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (গণমাধ্যম) সুদীপ দাস জানান, গুরুত্বপূর্ণ ও সাধারণ কেন্দ্রের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। সুষ্ঠু ভোট গ্রহণের স্বার্থে কেন্দ্রগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তৎপর থাকবেন।
এবার সিসিক নির্বাচনে মোট ভোটার ৪ লাখ ৮৭ হাজার ৭ শত ৫৩ জন। আগামী ২১ জুন সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।