সিগারেটের জ্বলন্ত টুকরা থেকে যত অগ্নিকাণ্ড

এক তরুণ ধূমপান করে জ্বলন্ত সিগারেটের টুকরাটা ফেলে দিলেন। সিগারেটের টুকরার আগুনটুকু নেভানোর কথা বেমালুম ভুলে গেলেন।

রাজধানীর একটি আবাসিক এলাকার ব্যস্ততম একটি জায়গায় এই দৃশ্য দেখে বেসরকারি একটি সংস্থায় কর্মরত সাবিনা ইয়াসমিন খুবই অবাক হয়েছিলেন। একে তো ধূমপান নিষিদ্ধ, তার ওপর জ্বলন্ত টুকরা থেকে হতে পারে অগ্নিকাণ্ড। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘সিগারেটের টুকরাটি ফেলার আগে একজন তরুণের এইটুকু সচেতনতা যদি না থাকে, তাহলে কেমনে হবে? ব্যস্ততম এলাকাটিতে এই সিগারেটের টুকরা থেকেও তো আগুন লাগার সম্ভাবনা আছে।’

সাবিনা ইয়াসমিন যে আশঙ্কার কথা বলছেন, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর প্রতিবছর তা হিসাব–নিকাশ করেই দেখিয়ে দিচ্ছে। ফায়ার সার্ভিসে প্রতিবছর তাদের ওয়েবসাইটে অগ্নিকাণ্ড নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তাদের হিসাব বলছে, বৈদ্যুতিক গোলযোগে সবচেয়ে বেশি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। এরপরেই আছে চুলার আগুন। তৃতীয় সর্বোচ্চ কারণের মধ্যে আছে সিগারেটের জ্বলন্ত টুকরা থেকে আগুন লাগার ঘটনা। এ ছাড়া ছোটখাটো আরও নানা কারণে বড় বড় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে বলছে ফায়ার সার্ভিস। এসব রোধে সচেতনতা বাড়ানোর ওপর জোর দিচ্ছে সংস্থাটি।

বিড়ি-সিগারেটের টুকরা থেকে আগুন

ফায়ার সার্ভিস বলছে, ২০২১ সালে শুধু বিড়ি-সিগারেটের জ্বলন্ত টুকরা থেকে ৩ হাজার ১৯৩টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। মোট অগ্নিকাণ্ডের তুলনায় এই হার ১৪ দশমিক ৭৮ শতাংশ। ক্ষতি হয়েছে ১৩ কোটি ৪১ লাখ টাকা। আর ২০২২ সালে একই কারণে ৩ হাজার ৮৭৮টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এটি মোট অগ্নিকাণ্ডের তুলনায় ১৬ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ। ক্ষতি হয়েছে ৩৪ কোটি ৬৪ লাখ টাকার বেশি। ২০১৮ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে বিড়ি সিগারেটের ফেলে দেওয়া জ্বলন্ত টুকরা থেকে ১৭ হাজার ৭৯৭টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।

বিড়ি-সিগারেটের জ্বলন্ত টুকরার পাশাপাশি ছোটদের আগুন নিয়ে খেলা, খোলা বাতির ব্যবহার, বাজি পোড়ানো, গরম ছাই বা জ্বালানি ফেলে রাখার মতো ঘটনায় প্রতিবছর আগুন লাগছে।

ফায়ার সার্ভিস বলছে, চুলা, বৈদ্যুতিক গোলযোগ, যন্ত্রাংশের ঘর্ষণজনিত, বজ্রপাত ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ, উচ্চতাপ, মেশিনের মিস ফায়ার, স্বতঃস্ফূর্ত: স্ফূর্ত প্রজ্বলন, চিমনির স্ফুলিঙ্গ, স্থির বিদ্যুৎ, রাসায়নিক বিক্রিয়া, বিস্ফোরণ (সিলিন্ডার, বয়লার), গ্যাস সরবরাহ লাইনের আগুন, যানবাহনের দুর্ঘটনাজনিত বা অজ্ঞাত কারণেও আগুন লাগছে। সতর্ক হলে এ রকম অনেক অগ্নিকাণ্ডই এড়ানো সম্ভব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *