রমজানে মোবাইল কোর্ট বন্ধের দাবি রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির

১২টি অধিদপ্তর দেশের রেস্তোরাঁগুলো মনিটরিং করে যাচ্ছে। তবে ১টি অধিদপ্তরের অধীনে মনিটরিং করার দাবি করছে রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি। আর রমজানে অযাচিত মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে হয়রানি না করার দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।

মঙ্গলবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে আয়োজিত ‘দ্রব্যমূল্যের চরম ঊর্ধ্বগতিতে রমজানে রেস্তোরাঁয় ন্যায্য মূল্যে স্বাস্থ্যকর খাবার বিক্রি, বিভিন্ন নেতিবাচক প্রচারণা এবং সরকারি সংস্থার অভিযানের নামে হয়রানি’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির মহাসচিব ইমরান হাসান। একই সঙ্গে তিনি ৮ দফা দাবি জানান।

নিরাপদ খাদ্য বাস্তবায়নে সবচেয়ে বড় অন্তরায় হচ্ছে সরকারের বিভিন্ন অধিদপ্তরের অসহযোগিতা ও সমন্বয়হীনতা বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি। সংগঠনটি বলছে, সরকারি বিভিন্ন সংস্থার মোবাইল কোর্টে রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির প্রতিনিধিত্ব রাখতে হবে। অযাচিতভাবে মোবাইল কোর্ট বন্ধ করতে হবে।

ইমরান হাসান বলেন, প্রত্যেকটা অধিদপ্তর বিক্ষিপ্তভাবে তাদের অযাচিত হস্তক্ষেপ/ক্ষোভ ঝাড়ছে রেস্তোরাঁ মালিকদের ওপর। পান থেকে চুন খসলেই কোনো বিশেষজ্ঞ লোক ছাড়াই যে যেভাবে পারছে জরিমানার নামে ভয়-ভীতি দেখিয়ে আমাদের ব্যবসার সুনাম নষ্ট এবং আর্থিক ক্ষতিসাধন করছে। এভাবে নিরাপদ খাদ্য বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। আমরা নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছিলাম। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের কাছে আমরা অনুরোধ করেছিলাম যে, আমাদের সেক্টরের ৯৫ শতাংশ কর্মী অদক্ষ ও স্বল্প-শিক্ষিত। তাদেরকে আগে ট্রেনিংয়ের আওতায় নিয়ে আসেন এবং আন্তঃমন্ত্রণালয়ে বৈঠক করে আমাদেরকে একটি মন্ত্রণালয়/অধিদপ্তর/সংস্থার অধীনে নিয়ে আসেন। আমাদেরকে একটি গ্রহণযোগ্য এসওপি প্রদান করেন। যার গাইডলাইনে আমরা চলতে পারব। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনো সংস্থাই আমাদেরকে সু-নির্দিষ্ট কোনো এসওপি দেয়নি।

তিনি বলেন, ঢাকা মহানগরের দুই সিটি কর্পোরেশনের মেয়র তাদের টিম দিয়ে আমাদের পরিচালনার/ মনিটরিং করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। যেখানে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ও আইসিডিডিআর-বিকে যুক্ত করেছেন, কিন্তু প্রধান স্টেক হোল্ডার হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতিকে যুক্ত করা হয়নি। এভাবে বিচ্ছিন্নভাবে কোনোদিনই সরকারের লক্ষ্য বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না। বর্তমানে যে পরিস্থিতি, তাতে আমরা ভয় পাচ্ছি, প্রতিবারের মতো এবারও রমজানে আমাদের ওপর বিশাল খড়গ নেমে আসবে। তাই আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির দাবিগুলো হলো- ১) সরকারি বিভিন্ন সংস্থার মোবাইল কোর্টে রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির প্রতিনিধিত্ব রাখতে হবে২) করোনা মহামারিতে প্রায় ৩০ শতাংশ রেস্তোরাঁ বন্ধ হয়েছে। যারা টিকে আছে তারাও ধুঁকে ধুঁকে চলছে। এ অবস্থায় ব্যবসায় টিকে থাকতে এ খাতের উদ্যোক্তাদের প্রতি সরকারের সহযোগিতা জরুরি। ৩) সাম্প্রতিক সময়ে চড়া মূল্যস্ফীতিতে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে। সব মিলিয়ে রাজার নিয়ন্ত্রণ না করা গেলে রেস্তোরাঁ খতিটি বড় সংকটের দিকে ধাবিত হচ্ছে । ৪) রেস্তোরাঁ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে নেতিবাচক প্রচারণা মিথ্যা প্রমাণিত হলে আইসিটি আইনে মামলা করা হবে। ৫। কর্মজীবী, শ্রমজীবী, দিনমজুরদের জন্য নি¤œ ও মাঝারি মানের রেস্তোরাঁ (বাংলা খাবার) ও নিচে যুক্ত এর ক্ষেত্রে ভ্যাটের হার হবে সর্বোচ্চ ৩% এবং ট্যাক্সের হার হবে সর্বোচ্চ ০.৫%।
৬) তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ থেকে যে গ্যাস সরবরাহ পাচ্ছি তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল অর্থাৎ পূর্বের তুলনায় গ্যাস পাচ্ছি ১০০ এর মধ্যে ৪০% মাত্র। তাই রেস্তোরাঁ সেক্টরে গ্যাস সরবরাহ বৃদ্ধি করা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। ৭) মৌসুমি ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্যর প্রতিবছরই মাহে রমজান সমাগত হলে বিভিন্ন মৌসুমি-ফড়িয়া/ব্যবসায়ীরা ইফতারের নামে ইফতারি পসরা সাজিয়ে বসে। এদের হাইজেনিক/নিরাপদ খাদ্য বিষয়ে কোনো জ্ঞান নেই, এই বিষয়ে নজর দেওয়া অতীব জরুরি। ৮) রমজানে ইফতারি ও সেহরি সংশ্লিষ্ট কর্মকান্ড- নির্বিঘ্নে পরিচালনা করার সুযোগ প্রদান করতে হবে। সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সভাপতি ওসমান গনি প্রমুখ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *