বাংলাবান্ধায় বিজিবি-বিএসএফ’র মনোমুগ্ধকর রিটট্রিট প্যারেড

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার বাংলাবান্ধা জিরোপয়েন্টে ভারত-বাংলাদেশ উভয় দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মনোমুগ্ধকর রিটট্রিট প্যারেড পর্যটকদের কাছে আকর্ষণী।
১৯৯৭ সালের ১ লা সেটেম্বর বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর উদ্বোধনের পর অবকাঠামো নির্মাণ সম্পন্ন হয়। এরপর ভারত থেকে সীমিত হারে পাথর সহ অন্যান্য পণ্য আমদানি হত এবং বাংলাদেশ থেকে ভারতে তুলা, পাট, ভুট্টা, গার্মেন্ট ঝুট ইত্যাদি ভারত ও নেপালে রপ্তানি হত। কিন্তু পঞ্চগড় ও তেঁতুলিয়া উপজেলাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবীর প্রেক্ষিতে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর দিয়ে ২০১৮ সালে ইমিগ্রেশন বা লোক পারাপার চালু হয়। পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা-ফুলবাড়ি ইমিগ্রেশন চেকপোষ্ট পার হলেই ভারতের পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম শহর শিলিগুড়ি। শিলিগুড়ির হয়ে নেপাল, ভুটান, ভারতের সিকিম,দাজিলিংসহ বিভিন্ন পর্যটন স্পটের যোগাযোগ বেশ সহজ। অন্য যে কোনো স্থলবন্দরের ইমিগ্রেশন চেকপোট দিয়ে এসব এলাকায় যাতায়াত ব্যয়বহুল এবং সময় ও বেশি লাগে। এজন্য এই স্থলবন্দর চেকপোষ্ট অল্প দিনেই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। যে কারণে ইমিগ্রেশন চালুর কার্যক্রম চালুর পর থেকে এ বন্দরের গুরুত্ব পর্যটকদের কাছে দিনদিন প্রাধান্য পায়। ফলে ভারত, নেপাল, ভূটান ও চীন সহ ভারতের সেভেন সিস্টার নামে খ্যাত যোগাযোগের প্রবেশদ্বার চতূর্দেশীয় ব্যবসা-বাণিজ্যের এ বন্দর দিয়ে ভ্রমণ পিপাষু পর্যটক, বিদেশে পড়-য়া ছাত্র-ছাত্রী, চিকিৎসা নিতে রোগীরাও এই বন্দরটি যাতায়াতের পছন্দ করেন। শুল্কবিভাগের পরিসংখ্যান অনুযায়ী করোনা ভাইরাসের আগে এবন্দর দিয়ে গড়ে ২ হাজার থেকে ৩ হাজার যাত্রী পারাপার হত। করোনা কালীনও বন্দর দিয়ে সীমীত হারে রোগী পারাপার হলেও সেই সংখ্যাও গড়ে কমবেশী দু’থেকে তিন শতাধিক ছিল। করোনা পরবর্তীতে এ বন্দর দিয়ে পর্যটক ভিসা সহ সকল ভিসা ভারতীয় কর্তৃপক্ষ বন্ধ রাখায় এই রুটটি দীর্ঘ কয়েকমাস ধরে বন্ধ ছিল। এ রুটটি দিয়ে যাত্রী পারাপার বন্ধ থাকায় বুড়িমারী সহ অন্যান্য রুটে যাত্রীদের ভোগান্তির পেক্ষিতে স্থানীয়জনতা মানববন্ধন সহ ব্যবসায়ীদের সংগে ঐক্যবন্ধভাবে চালুর জন্য আন্দোলন সংগ্রামে ছাপিয়ে পড়েন। অবশেষে দেশের সর্ব উত্তরের সীমান্ত বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর ও ভারতের সেভেন সিস্টার রাজ্যের প্রবেশ দ্বার ফুলবাড়ি ইমিগ্রেশন রুট দিয়ে ভারতে প্রবেশের জন্য বাংলাদেশী আগ্রহী ভিসা প্রাপ্তিদের জন্য এ রুটটি দীর্ঘ কয়েক মাস বন্ধ থাকার পর গত গত ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২৩ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ স্পেশাল সুপারিনটেনডেন্ট অব পুলিশ (টি), ইনটিলিজেন্স ব্রাঞ্চ কর্তৃক স্বাক্ষরিত পত্রে ২৫ ফেব্রুয়ারি/২০২৩ খ্রিঃ থেকে নতুন ভিসায় আবেদনকারী যাত্রীরা রুট ব্যবহারের অনুমতি দিলে কিছুদিন পরে পুনরায় ভারত ভিসা দেয়া শুরু করলে লোক পারাপার চালু হয়। এরআগে ইমিগ্রেশন কার্যক্রম শুরুর পর থেকেই ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবাহিনী বিজিবি ও বিএসএফ যৌথভাবে রিটট্রিট প্যারেড চালু করেন। এই প্যারেডের মাধ্যমে সপ্তাহে প্রতি মঙ্গলবার ও শনিবার বিকাল সাড়ে ৫ টায় উভয় দেশের পতাকা মনোমুগ্ধকর প্যারেডের মাধ্যমে পতাকা নামানো হয়। এই প্যারেড দেখার জন্য সপ্তাহের দুইদিন উভয় দেশের পর্যটক সহ দূরদূরান্তের জনসাধারণ বাংলাবান্ধা জিরোপয়েন্টে ভিড় করেন প্যারেড উপভোগ করার জন্য ভিড় করেন।

পঞ্চগড় ১৮ ব্যাটালিয়ন বর্ডারগার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এডিসোনাল ডিরেক্টর (এডি) বলেন, পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া একটি পর্যটন এলাকা। এখানে প্রতিনিয়ত দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এবং বিদেশি পর্যটকরা আসলে বাংলাবান্ধা জিরোপয়েন্ট পরিদর্শন করেন। বিজিবির পক্ষ থেকে জিরোপয়েন্ট আইপিতে পর্যটকদের বসার জন্য গ্যালারি নির্মাণ করা হয়। আগন্তুক এই পর্যটকদের আনন্দ দেবার জন্য ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবাহিনী যৌথভাবে রাজকীয় রাষ্ট্রীয় পোষাকে সুসজ্জিত হয়ে সপ্তাহে শনিবার ও মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৫ টায় মনোমুগ্ধকর প্যারেড পরিদর্শন করেন এবং উভয় দেশের জাতীয় পতাকা নামান। এই প্যারেড দেখার জন্য উৎসুক জনতা ও পর্যটকরা ভিড় করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *